দখিনের খবর ডেস্ক ॥ বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২৬২ তালিকাভুক্ত মিলারের মধ্যে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন মাত্র ৩০ জন। তাদের সরকারি খাদ্যগুদামে ১০ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় ৯৫ শতাংশ মিলার চুক্তির বাহিরে রয়েছে। ফলে এ উপজেলায় সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্র জানায়, এ উপজেলায় ৪৯৩ জন তালিকাভুক্ত মিলার রয়েছেন। এর মধ্যে গত ইরি-বোরো মৌসুমে চুক্তিবদ্ধ না করায় ২৩১ মিল মালিককে দুই মৌসুমের জন্য বরাদ্দ বাতিল করা হয়। অবশিষ্ট ২৬২ মিলারের (মিল মালিক) মধ্যে ৩০ জন আমন সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ২৩২ জন মিলার সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক জানান, সরকারের সংগ্রহ দর প্রতি কেজি চাল ৩৭ টাকা। বর্তমান বাজারে চালের দর ৪২ টাকা থেকে ৪৩ টাকা কেজি। এ অবস্থায় সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ দিলে প্রতি কেজিতে ৫-৬ টাকা করে ক্ষতি হবে। তাই চলতি মৌসুমে অধিকাংশ মিলার সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। যে কয়েকজন চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অরুণ কুমার প্রামাণিক জানান, এ উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ১০ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মিল মালিকদের সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহের চুক্তির মেয়াদ গত ১০ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। মাত্র ৩০ জন মিলার সরকারের সঙ্গে ১০৯৫.৪৮০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত দুপচাঁচিয়া ও তালোড়া খাদ্য গুদামে ৫৮০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুপচাঁচিয়া খাদ্যগুদামে ৫৩৯ মেট্রিক টন ও তালোড়া খাদ্যগুদামে ৪১ মেট্রিক টন। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই চাল সংগ্রহের তারিখ নির্ধারণ রয়েছে। তিনি আরও জানান, বাজারে চালের দামের সঙ্গে সরকারের সংগ্রহ দরের সামঞ্জস্য না থাকায় অধিকাংশ মিল মালিক চুক্তিবদ্ধ হওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। খাদ্য বিভাগ থেকে চলতি আমন মৌসুমের চাল সংগ্রহ অভিযান সফল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জানা গেছে, পশ্চিম বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত ৪৯৩টি মিল-চাতাল হ্যাসকিং মিলের মধ্যে ১৬টি অটো রাইচ মিল রয়েছে। দীর্ঘদিন উপজেলার চাতাল ব্যবসায়ীরা ধানের তুলনায় চালের দাম কম পাওয়ায় লোকসানের মধ্যেই ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন। এরই মাঝে করোনাভাইরাস মিল মালিকদের মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ কয়েক মাস যাবত সরকারি ছুটির কারণে বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে ধান কিনতে না পাড়ায় মিল-চাতাল বন্ধের পাশাপাশি রয়েছে শ্রমিক সংকট। অধিকাংশ মিলার খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ফলে এ উপজেলায় আমন মৌসুমের চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Leave a Reply